সারোয়ার জাহান : অবশেষে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা জাতীয় সংসদ ও আশপাশের মূল নকশা আনার প্রক্রিয়া শুরু হলো। আগামী সোমবার (০৬ জুন) ভোরে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে বিখ্যাত স্থপতি লুই আই কানের মূল নকশা আনতে।
এরই মধ্যে জাতীয় সংসদসহ আগারগাঁও এলাকার সমস্ত নকশা যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পেন্সিলভানিয়া ইউনিভার্সিটির আর্কাইভে ৮ হাজার নকশা রয়েছে বলে বাংলাদেশের স্থাপত্য অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। এরমধ্যে ৮৫৩টি নকশা যেগুলোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই ৮৫৩টি নকশাই সংগ্রহ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এর আগে গত ২৯ মার্চ মঙ্গলবার নকশা আনার প্রক্রিয়া নিয়ে যৌথসভা হয় সংসদে। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
যৌথসভা শেষে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জানান, ‘আমাদের কমিশন (পরিকল্পনা কমিশনের) বৈঠকের নকশাগুলো আনার সিদ্ধান্ত হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই নকশাগুলো আনার উদ্যেগ নেওয়া হয়। নকশা আনতে যে অর্থের প্রয়োজন তা সরকার দেবে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পেন্সিলভানিয়া ইউনির্ভাসিটি থেকে নকশা খুঁজতে ৩ হাজার ৫৫০ মার্কিন ডলার ব্যয় করতে হয়েছে। নিশ্চিত হওয়া গেছে সেখানে ৮ হাজার নকশা এবং ডকুমেন্ট আছে। কিন্তু সবগুলো রেলিভেন্ট (সম্পর্কিত) না। এরমধ্যে ৮৫৩টি নকশার প্রয়োজন বলে তারা স্থাপত্য অধিদপ্তরকে জানিয়েছে। এই নকশাগুলোই আনা হবে। এছাড়া ১১৫টি নকশা আছে যেগুলো আনবিল্ড (এখনো কোনো ভবন হয়নি), ওই আনবিল্ড নকশার জন্য ৬০ হাজার ডলারের মতো লাগবে।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে লুই আই কানের প্রতি নকশার জন্য ১৯ ডলার খরচ হবে। এছাড়া প্রতিনিধি দলের আসা যাওয়ার খরচ রয়েছে। তবে খরচ যাই লাগুক সরকার নকশা আনতে আন্তরিক রয়েছে বলে জানা গেছে।
সোমবার (০৬ জুন) ভোরে জাতীয় সংসদের অতিরিক্ত সচিব (আপিএ) আ ই ম গোলাম কিবরিয়ার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের টিম যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওয়ান হবে।
প্রতিনিধি দলে অন্যদের মধ্যে রয়েছেন, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (উন্নয়ন শাখা-৯) অধিশাখা মো. মনিরুজ্জামান, গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব, স্থাপত্য অধিদপ্তরের সহকারী স্থপতি সাইকা বিনতে আলম।
প্রতিনিধি দলের প্রধান জাতীয় সংসদের অতিরিক্ত সচিব আ ই ম গোলাম কিবরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমরা সোমবার ভোরের ফ্ল্যাইটে যাবো।
স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির বলেন, আমরা পাঁচজন ১৫ দিনের জন্য যাচ্ছি যুক্তরাষ্ট্রে। নকশাগুলো একবার দেখবো। এরপর সিদ্ধান্ত জানানো হবে কোন কোনটি লাগবে। এই সিদ্ধান্ত জানানোর পর প্রিন্ট কপি পেতে মাস দেড়/দুই সময় লাগতে পারে নকশাগুলো হাতে পেতে। এজন্য পরবর্তীতে আরেকটি দল বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে নকশাগুলো আনবে। সেটা গিয়ে নিয়ে আসতে পারে অথবা ওদের কাছে চাইলে ওরা পাঠিয়েও দিতে পারে।
১৯৬১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের আমলে বর্তমান সংসদ ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সে সময় স্থপতি মাজহারুল ইসলামকে এই ভবনের স্থপতি নিয়োগ করা হয়। তার প্রস্তাবেই লুই আই কান এই প্রকল্পের প্রধান স্থপতি হিসেবে নিয়োগ পান। দীর্ঘদিন পর ১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি এ ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। সূত্র :বাংলানিউজ