ফারুক আলম : আমলা কিংবা মন্ত্রী-এমপিদের উপর নির্ভর করে বিএনপি ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে পারবে না বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তিনি মনে করেন দলকে চাঙ্গা করতে হলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের গুরুত্ব দিতে হবে।
মঙ্গলবার সকালে দৈনিক আমাদের অর্থনীতির নিয়মিত বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নাসিমা খান মন্টিসহ পত্রিকার সাংবাদিকরা।
তৃণমূলকর্মীদের বিষয়ে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, তৃণমূলকর্মীরা রাজনীতি করতে গিয়ে কেউ তাদের ভাইকে হারিয়ে, জমি হারিয়েছে, মামলার ভয়ে ঘর ত্যাগ করেছে আবার কেউ বা জেলে বন্দি আছে। তাদের এ ধরনের ত্যাগী মন মানসিকতা সত্য একটি দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এজন্য কেন্দ্র থেকে তৃণমূলকর্মীদের সঠিক মূল্যায়ন করতে হবে।
সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ৯০ শতাংশ ভোট পাবে এমন আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, দেশের ভেতর বিএনপির বিপুল জনসমর্থন থাকার পরেও রাজনৈতিভাবে কিছু করতে পারছে না। তবে এই মুহূর্তে সরকার যদি সুষ্ঠু নির্বাচন দেয় তাহলে ৯০ শতাংশ ভোট বিএনপি পাবে। এ জনসমর্থন যদি কাজে না লাগাতে পারে তাহলে বিএনপির ব্যর্থতা।
রুমিন ফারহানা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রতি আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থা না থাকায় বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এ নির্বাচন কমিশনের কর্মকা- প্রশ্নবিদ্ধ। জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। সম্প্রতি সিটি করপোরেশন ও ইউপি নির্বাচনে যে পরিমাণ সহিংসতা, জাল ভোট ও ভোট কাটচুপি হয়েছে তা বিগত অন্যসব নির্বাচনের চেয়ে বেশি।
তিনি বলেন, ইউপি ও সিটি করপোরশন নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ায় আওয়ামী লীগ সরকার বড় ধরনের সুযোগ হারিয়ে ফেলেছে। নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু হলে সবাই এ নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা রাখত। এমনকি এ কমিশনের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হত।
নির্বাচন কমিশনের প্রসঙ্গে রুমিন ফারহানা বলেন, সংবিধানে নির্বাচন কমিশনকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ভোট কেন্দ্র স্থগিত, নির্বাচন বর্জন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতাসহ এ বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যারের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের রয়েছে। নির্বাচন কমিশন যদি এসব ক্ষমতা সঠিকভাবে কাজে লাগায় তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশন তা করেননি।
রাজনীতি এখন ব্যবসায়ী ও মাস্তানদের হাতে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবারের ইউপি নির্বাচনে প্রার্থীতা পাওয়ার জন্য ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে। অর্থাৎ যিনি ৭০ লাখ টাকা দিয়ে মনোনয়ন ক্রয় করেন তিনি তো ব্যবসা করার জন্য ক্ষমতায় এসেছেন। রাজনীতিতে এখন শুধুই টাকার খেলা।
কম গণতন্ত্র বেশি উন্নয়ন যা পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও সামরিক শাসক আইয়ুব খানের শ্লোগন ছিল আর সেই শ্লোগান এখন আওয়ামী লীগ সরকার গাইছে বলে মনে করেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তিনি প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, কেউ যদি প্রশ্ন করে আপনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান নাকি আওয়ামী লীগ সরকারকে চান। তখন আমি বলবো দুটোই চাই। আবার আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয়- আপনি গণতন্ত্র চান নাকি উন্নয়ন চান। আমি বলবো দুটোই চাই। কারণ এ দুটোই আমার মৌলিক অধিকার। তবে গণতন্ত্র ছাড়া কোনো দেশ উন্নয়নের দিকে এগোতে পারে না। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন- পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের কথা। অর্থাৎ যেদেশে গণতন্ত্র থাকে না সেদেশে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা বাড়তে থাকে।