ডেস্ক রিপোর্ট : আবদুর রহমান একটি বেসরকারি অফিসের মাঝারি পদের কর্মকর্তা। ব্যস্ততার কারণে রোজায় বাসায় খুব একটা ইফতারি করা হয় না তাঁর। তবে প্রথম রোজার ইফতারটি তিনি বাসাতেই করেন। সে জন্যই গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর ফকিরাপুলের এজিবি কলোনির বাজারে ঢুঁ মারেন তিনি। কিন্তু তাঁর ফুরফুরে মেজাজ মুহূর্তেই তিরিক্ষি। দোকানির ওপর মহাক্ষিপ্ত। সামান্য শসা আর বেগুনের এত দাম? তাও ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে। রাগে গজগজ করতে লাগলেন। সাহস সঞ্চয় করে কাছে গিয়ে প্রশ্ন করতেই রহমান সাহেব বললেন, ‘ভাই, দুঃখের কথা কী বলব। পৃথিবীর সব জায়গায় উৎসবের সময় পণ্যের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। বড়দিনের আগে নিত্যনতুন পণ্য কে কত কম দামে বাজারে ছাড়বে তার প্রতিযোগিতায় নামে বিভিন্ন কম্পানি, যাকে বলে মেগা সেল। আর আমাদের দেশে সব উল্টো। রোজা, ঈদ ও পূজায় আমাদের পেয়ে বসে ব্যবসায়ীরা।’ তিনি আরো বলেন, ‘গত পরশু এই বাজার থেকে শসা কিনেছি ২৫-৩০ টাকায়। আজ তার দাম ৭০-৮০ টাকা। বেগুন এক দিন আগেও ছিল ৩০-৩৫ টাকা কেজি। আজ চাইছে ৮০ টাকা। দেশে কী এমন দুর্যোগ ঘটল যে সব কিছু আগুন হয়ে গেল? বাজারে পণ্যের তো কোনো অভাব দেখছি না। সব ধান্দাবাজি বুঝলেন, সব ধান্দাবাজি’—বলেই বাড়ির পথ ধরলেন তিনি।
রাজধানীর বাজারগুলো গতকাল ঘুরে দেখা যায়, শরবত খাওয়ার চিনির কেজি ৬৫ টাকা। ছোলার দাম উঠে গেছে প্রতি কেজি ১০০-১২০ টাকায়। মাঝারি মানের এক কেজি খেজুর কিনতে হলে গুনতে হবে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। বাড়তির দিকে রয়েছে কাঁচা মরিচ, টমেটো, আদা, ধনে পাতা, পুদিনা পাতার দামও। তবে সয়াবিন তেল, মসুর ডালের দাম অপরিবর্তিত।
গতকাল কারওয়ান বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোনো পণ্যেরই ঘাটতি নেই। শসার উৎপাদন এবার পর্যাপ্ত। ব্যবসায়ীদের ভাষায়, অনেকটা বাম্পার ফলন হয়েছে। কারওয়ান বাজারে সাধারণ সময়ে গড়ে ১০ থেকে ১৫ ট্রাক শসা এলেও রবিবার রাতে এসেছে ১৮ থেকে ২০ ট্রাক। তাহলে দাম বেশি কেন? ব্যবসায়ীরা জানান, রোজা উপলক্ষে এখন শুধু ঢাকা নয়, দেশের সব অঞ্চলেই শসার চাহিদা বেড়েছে।
জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের কাঁচা তরকারির আড়তদার ইমরান মাস্টার কালের কণ্ঠকে জানান, শসার এখন ভড়া মৌসুম। বাজারে কোনো ঘাটতি নেই। তবে আগামীকাল (আজ) প্রথম রোজা হওয়ায় বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে উৎসস্থল ময়মনসিংহের ফুলপুর, হালুয়াঘাট ও জামালপুরের নালিতাবাড়ী থেকে শসা সরবরাহে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এই সুযোগে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি আরো জানান, গত শুক্রবারও তাঁরা পাইকারি বাজারে শসা বিক্রি করেছেন ১১-১২ টাকায়। আজ সেটাই বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২৫ টাকায়। তবে তিনি জানান, তিন-চার দিনের মধ্যেই এই বাজার পড়তে থাকবে।
ইফতারের আরেকটি প্রধান উপকরণ হচ্ছে খেজুর। এ পণ্যটির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়েছে কয়েক গুণ। গতকাল বাদামতলীতে গিয়ে দেখা যায়, আমদানি প্রচুর হলেও দাম চড়া। বাজার ঘুরে জানা যায়, আরব আমিরাতের ১০ কেজি প্যাকেটের নাগাল খেজুরের দাম ১১০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪০০ টাকা, পাঁচ কেজি মরিয়ম খেজুরের দাম ২৪০০-২৫০০ থেকে বেড়ে ২৮০০-৩০০০, ১০ কেজি বরই খেজুরের কার্টন ১২৫০-১৩০০ থেকে বেড়ে ১৪০০-১৫০০, ছয় কেজি বারারি খেজুর ১৭০০-২০০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ২২০০-২৪০০, তিউনিসিয়ায় প্যাকেটজাত পাঁচ কেজি খেজুর ১১০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪০০-১৫০০ টাকা।
জানতে চাইলে বাদামতলীর আমদানিকারক ও ফল মালিক সমিতির সেক্রেটারি সিরাজুল ইসলাম জানান, রমজান মাসে দেশে খেজুরের চাহিদা থাকে ২৫ হাজার টন। কিন্তু এবার আমদানি হয়েছে ৩০ হাজার টন। তার পরও দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে যাওয়ার পরই দাম বেশি বেড়ে যাচ্ছে। কালের কন্ঠ