ইয়াছিন রানা : ব্লগার, মুক্তমনা, নাস্তিক, সংখ্যালঘু একের পর এক হত্যাকা- ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এসব হত্যাকা-ের প্রতিরোধ এবং বিচারে সরকারের কার্যকারিতা নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন সংখ্যালঘু নেতারা। শুধুমাত্র সংখ্যালঘুরাই হত্যার শিকার হচ্ছে না, যারা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং অতি সাধারণ মানুষরাও হত্যাকা-ের শিকার হচ্ছেন। এই ধারাবাহিক হত্যাকা-ের ফলে খুবই ভীত হয়ে পড়ছে সংখ্যালঘুরা।
হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণা দাশগুপ্ত আমাদের সময় ডটকমকে বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি, মৌলবাদীরা একাত্তরের ধারাবাহিকতায় একের পর এক হত্যাকা- চালিয়ে যাচ্ছে। এই শক্তির উদ্দেশ্য একটাই দেশ সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার করে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা, যাতে করে বাংলাদেশকে মধ্যপ্রাচ্যের কোন একটি দেশ বানানো যায়।
তিনি বলেন, এই মৌলবাদী শক্তির মতের বিরুদ্ধে যারা দাঁড়াচ্ছে সে মুসলিম হোক আর যাই হোক, তাদের উপরও হামলা হচ্ছে। যেমন এসপি বাবুলের স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস মোকাবেলায় সরকারের ভূমিকা যথেষ্ট নয়, আরো শক্ত ভূমিকা পালন করতে হবে।
পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাপস পাল বলেন, বর্তমানে যে হত্যাকা- চলছে তাতে আমরা খুবই ভীত। বুধবার থেকে অনেক মন্দিরের পুরোহিত ফোনে যোগাযোগ করেছেন যে আমরা কী করবো। আইনশৃঙ্খলার অবস্থা যাই হোক এবং এক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকাই যাই হোক, আমরা ঝিনাইদহের পুরোহিত হত্যাকা-ের পর আর কোন লাশ চাই না।
ইসকোন’র সভাপতি রুপানু গৌরদাস ক্ষ্রমচারি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার শক্তিশালী সরকার, এ হত্যাকা- প্রতিরোধে সরকারের ভূমিকা পর্যাপ্ত নয়, তাদের ভূমিকা আরো শক্ত ও সক্রিয় হতে হবে। দেশে শুধু যে সংখ্যালঘুরা হত্যার শিকার হচ্ছে বিষয়টা তা নয়, মৌলবাদের বিরোধী মতবাদের লোকজন এবং অতি সাধারণ মানুষ এই সন্ত্রাসের দ¦ারা আক্রান্ত হচ্ছে। সরকারের ভূমিকা যাই হোক, একের পর এক হত্যাকা- বেড়েই চলছে, আমরা আর কোন লাশ চাই না।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত প্রদিপ চক্রবর্তী বলেছেন, পুরোহিত হত্যাকা-ে আমরা খুবই বিব্রত, আপরনারা তো বুঝতেই পারছেন আমাদের মানসিক অবস্থা, কথা বলার মতো কোন অবস্থা নেই। কোন ধরণের হত্যাকা- হোক আমরা তা চাই না।
গত মঙ্গলবার সকালে ঝিনাইদহ সদরের করাতিপাড়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বী বৃদ্ধ পুরোহিত আনন্দ রগাপাল গাঙ্গুলিকে গলাকেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এর আগে এ বছরের জানুয়ারি মাসে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের কালুহাটি গ্রামে হোমিও চিকিৎসক খ্রিষ্টানধর্মে ধর্মান্তরিত ছামির আলীকে (৮০) ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে কয়েকজন মুখোশধারী। বুধবার টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বেলতৈলগ্রামে আবু সাঈদ ওরফে নুরু মাস্টারকে (৭০) কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া মঙ্গলবার নাটোরের বড়াইগ্রামের বনপাড়ায় খ্রিষ্টান দোকানি সুনীল গোমেজকে হত্যা করা হয়েছে। সম্পাদনা : উম্মুল ওয়ারা সুইটি