ওয়ালি উল্লাজ সিরাজ: সুবহে সাদিকের আগের সময়টাকে সাহরি বলা হয়। মিরকাত শরহে মিশকাত গ্রন্থে মোল্লা আলী কারি (র.) বলেন, ‘অর্ধরাত্রি থেকে সাহরির সময় শুরু হয়।’ প্রসিদ্ধ মুফাসসির আল্লামা জামাখ্শারি (রা.) এবং ফকিহ আবুল লাইছ সমরকন্দি (রা.) বলেন, সাহরির সময় হলো রাত্রের শেষ তৃতীয়াংশ। সাহরি বিলম্বে খাওয়া সুন্নত। তবে সন্দেহের সময় পর্যন্ত বিলম্ব করা যাবে না। তার আগেই নিরাপদ সময়সীমার মধ্যে পানাহার করলে নবীজির সুন্নত আদায় হয় এবং রোজা রাখাও সহজ হয়। হযরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সাহরি খাও; যদি তা এক ঢোঁক পানিও হয়।’ অন্যত্র বলেছেন, ‘তোমরা সাহরি খাও; যদি এক লোকমা খাদ্যও হয়।’ উপরিউক্ত হাদিস দ্বারা সাহরির গুরুত্ব বোঝা যায়। এক ঢোঁক পানি, এক লোকমা খাদ্য, এক কাপ দুধ, সামান্য ফলমূল বা একটি খেজুরের মতো যৎসামান্য হলেও সাহরি গ্রহণ করা বরকতময় সুন্নত। এই বরকত ইহকাল ও পরকাল উভয়ের জন্যই।
এ ছাড়া সাহরি খাওয়া সমস্ত দিন রোজা রাখার জন্য অত্যন্ত সহায়ক, সাহরির সময় জেগে ওঠা রোজার প্রতি আগ্রহের যথেষ্ট প্রমাণও বটে। সাহরির সময় আরামের নিদ্রা বর্জন করে জেগে ওঠা প্রকৃতপক্ষে এক প্রকারের ইবাদত। এতে শেষ রাতে জেগে ওঠার অভ্যাস তৈরি হয় এবং তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের নসিব খুলে যায়। সাহরির সময় জেগে ওঠা এক প্রকারের মুজাহাদা বা সাধনাও বটে। এই সময় আল্লাহর রহমত নাজিলের সময়, আল্লাহপ্রেমীদের আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বাপেক্ষা উত্তম সময়। যাঁরা এই বরকতের সময় জেগে উঠে আল্লাহর মহান দরবারে মোনাজাত করেন এবং ইস্তিগফার করেন, আল্লাহ তাঁদের স্বীয় ভালোবাসা ও নৈকট্য দানে ধন্য করেন।
সাহরির মাসআলা
কোনো কারণে সাহরি খাওয়া সম্ভব না হলেও রোজা রাখতে হবে, কোনো প্রকার বাহানা বা ওজর রোজা ছাড়ার জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। ইচ্ছাকৃতভাবে সাহরি বর্জন করা সুন্নতের বরখেলাপ। কারণ, সাহরি খাওয়া সুন্নত। তা ছাড়া নবীজি (সা.) বলেছেন, সাহরি ছাড়া রোজা রাখা ইহুদি-নাসারাদের ধর্ম। তাই সাহরি গ্রহণ করে ইসলামি রোজার স্বকীয় বৈশিষ্ট্যকে রক্ষা করা ইমানদারদের কর্তব্য।