এম কবির : দেশে সাম্প্রতিক অপহরণ, গুম ও খুনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরকে দায়ী করার সংস্কৃতি জাতির জন্য হতাশাজনক বলে মনে করেন দেশের বিশিষ্টজনরা। তাদের মতে, এতে একদিকে তদন্ত কাজ প্রভাবিত হবে,অন্যদিকে পার পেয়ে যাবে প্রকৃত অপরাধী। অনেকে বলেছেন গণতন্ত্র নিষ্ক্রিয় থাকলে দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হবেই। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে জাতীয় ঐক্য দরকার। সারাদেশে সাঁড়াসি অভিযানে গ্রফতার ১১শ‘ বেশি। সাঁড়াসি অভিযানের মাঝে ঘটছে খুনের ঘটনা। ৪ দিনে বন্দুকযুদ্ধে ১০ জন নিহত হন। একর পর এক ঘটছে সংখ্যালঘু খুনের ঘটনা। গতকাল পাবনায় ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে পাবনায় আশ্রমের সেবক নিত্যরঞ্জন ও যুবলীগ নেতা মান্না চৌধুরী খুন হন। ১৭ জেলায় ১৮ মাসে টার্গেট খুন হন ৪৯ জন।
দেশে সাম্প্রতিক খুন, গুমসহ আইনশৃঙখলা পরিস্থিতির জন্য জন্য পরস্পরকে দোষারোপ করতে দেখা গেছে বর্তমান ও সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রীকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, গত কয়েক মাস ধরে দেশে যেসব গুপ্তহত্যা হয়েছে তার সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াত কর্মীদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সরকারের কাছে ওইসব অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জড়িত থাকার বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। গত বুধবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্বব্য করেন। শেখ হাসিনা বলেন, সকল ক্লু, হত্যাকা-ের ধরন এবং গ্রেফতারকৃতদের পরিচয় থেকে বোঝা যাচ্ছে এদের কোন না কোনভাবে জামায়াত ও বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, এই জঘন্য ঘটনার সঙ্গে কোন জঙ্গি এবং সন্ত্রাসীর জড়িত থাকা সম্পর্কে কারো কাছে কোন তথ্য থাকলে তাদের নামঠিকানা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে পারেন।
সংবাদ সম্মেলনে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অসত্য, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, উস্কানিমূলক, অনভিপ্রেত, অগ্রহণযোগ্য ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর বগেম খালেদা জিয়া সরকারের গুম ও খুনের জন্য সরকারের ওপর দোষ চাপান।
পুলিশ অফিসারের স্ত্রীসহ দেশে চলমান গুম-খুনের সঙ্গে ‘আওয়ামী লীগ’ ও তার ‘দোসররা’ জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন মিলনায়তনে আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে তিনি এ মন্তব্য করেন। খালেদা জিয়া বলেন, তাদের ধরে বিচারের আওতায় আনলেই প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা আগে বাকশালীতে পড়েছিলাম, আবার সেদিকে ধাবিত হচ্ছি। জনগণ বিশ্বাস করেনা বিচার ও বিচার বিভাগ স্বাধীন। দেশে এখন দুই ধরনের আইন আছে। একটি আইনে বিরোধী দলের বিচার দ্রুত করা হচ্ছে, অন্য আইনে সরকারি দলের লোকদের কোনো বিচার করা হচ্ছে না।’
চীফ জাস্টিস, জজ এবং আইনজীবীদের উদ্দেশ্য বিএনপি প্রধান বলেন, ‘বিচার যদি করতে হয় তাহলে হাসিনারও বিচার করতে হবে। বঙ্গবন্ধু ট্রাস্টের মামলার চেক কে কোথায় নিয়েছে, কী করেছে, তা আমাদের রেকর্ড আছে। সকল আইনজীবী বিচারকদের কাছে আমরা ন্যায়বিচার চাই। এর বেশি কিছু আমাদের চাওয়ার নেই।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃবৃন্দ বলেছেন, রাজনৈতিক ‘ব্লেইম গেম’-এর কারণে প্রকৃত ঘাতকেরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে এবং নতুন নতুন হত্যাকা- ও অপরাধ সংঘটনে তারা উৎসাহিত হচ্ছে।
গতকাল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক কমিটির সভার এক প্রস্তাবে এ কথা বলা হয়। এতে ধারাবাহিক ‘টার্গেট কিলিং’- এর রোমহর্ষক ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানানো হয়। এতে বলা হয় খুনি ও দাগি সন্ত্রাসীদের ধরার চেয়ে প্রতিটি ঘটনা থেকে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের অপকৌশলের কারণে সন্ত্রাসীরা ক্রমে বেপরোয়া হয়ে উঠছে; মানুষের জানমালের নিরাপত্তা গুরুতর হুমকির মুখে। হত্যাকা-ের তদন্তের আগেই যখন সরক
ারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ রাজনৈতিকভাবে দোষারোপ শুরু করেন তখন গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করার সুযোগ থাকে না। দোষারোপের এই রাজনীতির কারণে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার পেশাদারিত্বও মারাত্মকভাবে খুণœ হয়।
জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস নির্মূল ও গণতন্ত্র রক্ষায় সবাইকে একত্রিত হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেছেন, গণতান্ত্রকে নিষ্ক্রিয় করলে হলে দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হবেই। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে জাতীয় ঐক্য দরকার।
গুপ্তহত্যার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ সরকারের কাছে আছে বলে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, খালেদা জিয়া ও তার সহযোগীরা আগুন সন্ত্রাস, মানুষ পোড়ানো, ষড়যন্ত্রের যোগসাজশকে আড়াল করতেই এ পথ বেঁচে নিয়েছে।
গতকাল (শুক্রবার) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি। সম্প্রতি দুর্বৃত্তদের হাতে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের পুলিশ গুপ্তহত্যার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে সমর্থ হয়েছে। আশা করছি মিতু হত্যার সঙ্গে জড়িতদেরও দ্রুত বের করতে পারবে।
মিতু হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ইতিমধ্যে পুলিশ কয়েকজনকে আটক করেছে। আশা করছি মিতু হত্যার রহস্য ও জড়িতদের দ্রুত খুঁজে বের করতে পারবে পুলিশ। এজন্য সবাইকে একটু ধৈয্য ধরতে হবে।