কিরণ সেখ: সরকার বিরোধী আন্দোলন ও দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিগঠনের ব্যর্থতার ফলে বিএনপির কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে কমিটি গঠনের ব্যর্থতা ঢাকতেই ইফতার পার্টির আয়োজন করছে বিএনপি। এর ভিতরে জঙ্গি দমনে সাঁড়াশি অভিযানের নামে সারাদেশে থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে দলটি অভিযোগ করেছে। আর এই চতুরমুখি সমস্যার পড়ে দলটি এখন সামিল হয়েছে ইফতারের রাজনীতিতে।
মূলত এই কার্যক্রমের মাধ্যমে দলের পূর্ণগঠন এবং নতুন করে আন্দোলনে নামতে চায় বিএনপি। তাই বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের শরীক দলগুলো আয়োজিত ইফতার পার্টিতে একের পর এক হাজির হচ্ছেন খালেদা জিয়াসহ দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
তবে বিএনপির শীর্ষস্থানীর নেতারা মনে করছেন, ইফতার পার্টির মধ্যে দিয়ে ভিতরে ভিতরে ২০ দলীয় জোটকে আরো সুসংগঠিত করা এবং নতুন করে একটি অন্য রকম আন্দোলন শুরু করতে যাচ্ছে বিএনপি। যেখানে অহিংস ও সহিংসতা দুটি মতকেই গ্রহণ করা হবে। সেখানে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনকেই প্রাধান্য দেয়া হবে।
বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা গেছে, ঈদের পরেই সরকার বিরোধী আন্দোলনের বিষয়বস্ত নিয়েই ইফতার পার্টিতে আলোচনা করবে বেগম জিয়া। দলের নেতাদের গ্রেফতার আতঙ্কে এই পন্থা বেছে নেওয়া হয়েছে বলে সূত্রটি জানায়।
এদিকে আন্দোলনের বিষয়ে বিএনপির নেতারা সরাসরি কথা না বললেও নানান রকম আভাস দিয়েছেন তারা। তারা বলেছেন, আগামী আন্দোলন যাতে কোন ভাবেই বিফলে না যায় সেই জন্য শীর্ষ মহল থেকে প্রচন্ড চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। আর সেই কারণে নানান পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। যা বাস্তাবায়ন হলে বিএনপির সুদিন ফিরে আসবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির চেয়ারপারসনের দুই জন উপদেষ্টা বলেন, ঈদের পর আন্দোলনের কথা ভাবছে বিএনপি। একথা ঠিক। কিন্ত এই বিষয়টি এখনও দলীয় ফোরামে আলোচনা হয়নি। তবে ইফতার পার্টি একটা ধর্মীয় বিষয়। তাই ইফতার পার্টি যে রাজনৈতিক দল আয়োজন করুক না কেনো এতে অংশগ্রহণের কোন দ্বিমত থাকতে পারে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ হয়তো বলবে, রাজপথের রাজনীতি ছেড়ে বিএনপি ইফতারের রাজনীতি শুরু করেছে। এই কথাটা ঠিক নয়। কারণ বিএনপি প্রতিবছর এই অনুষ্ঠান করে থাকে। আর তারি ধারাবাহিকতায় ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। ফলে অন্য কিছু চিন্তা করার অবকাশ এখানে নেই।
প্রসঙ্গ, আগামী ১২ জুন পেশাজীবী ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্মানে বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ইফতারের আয়োজন করবে খালেদা জিয়া। এ ছাড়া ১৩ জুন কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতারের আয়োজন করবেন গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে। এরপর ১৫ জুন ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে জোটের শরিক জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), ১৬ জুন একইস্থানে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), ১৮ জুন মতিঝিলের হোটেল পূর্বাণীতে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ১৯ জুন হোটেল সোনারগাঁওয়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), ২১ জুন বনানীর সেরিনা হোটেলে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), ২২ জুন লেডিস ক্লাবে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এবং ২৩ জুন গুলশানের ইমান্যুয়েলস কনভেনশন হলে বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ২৬ জুন জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ, যৌথভাবে) ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি থাকবেন খালেদা জিয়া।
এরআর আগে রোজার শুরুর দিনই এতিম শিশু ও আলেমদের সঙ্গে ইফতার করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এছাড়া আজ ১১ জুন রাজনীতিকরদের সম্মানে রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে ইফতারের আয়োজন করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।